পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিভক্ত হয়ো না। আর তোমাদের প্রতি আল্লাহর সেই অনুগ্রহ স্মরণ কর যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে; তখন তিনি তোমার হৃদয় প্রীতির বাঁধনে বেঁধে দিলেন এবং তোমরা তারই অপার অনুগ্রহে ভাই ভাই হয়ে গেলে। আর তোমরা এক অগ্নিকুণ্ডের কিনারায় ছিলে, তিনি তোমাদের তা থেকে রক্ষা করলেন। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তার আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যেন তোমরা হেদায়াত লাভ কর।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৩)
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে জীবন পরিচালনায় সব ধরনের মতভেদ, অনৈক্য আর পরস্পরের মাঝে বিভক্তি থেকে বিরত থেকে আল্লাহর রুজ্জু তথা পথে স্থির থাকার কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা পবিত্র কুরআনের শিক্ষা এবং বিশ্বনবির আদর্শের ওপর আমল করছিনা বলেই এত অনৈক্য আর সমস্যা।
পবিত্র কুরআনের শিক্ষার ওপর আমল করলেই আমাদের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত থাকবে। জাতীয় ও ধর্মীয় সব ধরনের ঐক্য সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। আর এ ঐক্য-ই আমাদের এক উম্মতে পরিণত হবার নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারে। যার ফলে আমরা এক শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হতে পারব।
মুসলিম উম্মাহকে পুনরায় এক শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হতে হলে অবশ্যই আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে এবং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিপূর্ণ অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে। কেননা আল্লাহ তাআলার নির্দেশ দিয়েছেন-
‘তুমি বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তাহলে তোমরা আমার অনুসরণ কর। (এমনটি হলে) আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)
এ নির্দেশ অনুসারেই বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য ছাড়া আল্লাহর ভালোবাসা লাভ হতে পারে না এবং মুসলিম জাতির শৃঙ্খলা ও ঐক্য বজায় থাকতে পারে না।
ইসলামের আবির্ভাবের আগে হিংস্র জন্তুর মত স্বভাব, নৈতিকতা বিবর্জিত এবং সব ধরনের ঘৃণ্য আচার-আচরণ এবং নির্লজ্জতা নিয়ে গৌরবকারী, দাম্ভিক ও বিদ্রোহী মনোভাব সম্পন্ন জাতি ছিল আরবরা।
সে যুগের সংস্কৃতিশীল ও শক্তিশালী দুটি বড় বড় সম্রাজ্য অর্থাৎ ইরান ও রোম তাদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং তাদেরকে নিজেদের অধীনস্ত রাখাও পছন্দ করতো না।
যখন এই অসভ্য ও বর্বর জাতি বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মতো পবিত্রকারী ও সম্মানিত রাসুলের আঁচল ধরে, তার আনুগত্যবরণ করে এবং আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে তখন তাদের জীবনাচার পাল্টে যায়। তারা অসুস্থ্য ও পাপচারযুক্ত সভ্যতা থেকে মানুষ এবং মানুষ হতে উন্নত স্বভাব-চরিত্রের অধিকারী মানুষে পরিণত হয়। তারা হয়ে ওঠে উত্তম স্বভাবে পরিপূর্ণ আল্লাহপ্রেমী মানুষ।
নিত্য মদের নেশায় মাতালরা প্রতিদিন পাঁচবার আল্লাহর দরবারে সেজদাকারী নামাজি বান্দায় পরিণত হয়। একে অপরের রক্তপিপাসুরা পরস্পর এমন ভাই ভাই হয়ে যায়, যার সামনে রক্ত সম্পর্কও তুচ্ছ মনে হয়। আর বিক্ষিপ্ত ও বিদ্রোহী জাতি এমনভাবে ঐক্যবদ্ধ হয় যেন শিশাগলিত প্রাচীর।
আল্লাহর রুজ্জু ধারণ করে, বিশ্বনবির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তারা আল্লাহর বাণী প্রচারেই নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করে। আর এ পথেই নিজেদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ নির্দ্ধিধায় উৎসর্গ করে। আর এই উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে উত্তাল সমুদ্রও তাদের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারেনি এবং ভয়ানক মরুভূমিও তাদের উদ্যমে চির ধরাতে পারেনি।
এমনকি অল্প সময়ের মধ্যেই ইসলামের বিজয়ী পতাকা পৃথিবীর বুকে চিরস্থায়ী, শান্তি ও নিরাপত্তা এবং সত্য ও খাঁটি তৌহিদের শিক্ষা এবং জীবন প্রদায়িণী আল্লাহর প্রেমের বাণী প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আলো ছড়িয়ে বিশ্বজগতকে প্রদীপ্ত করে
তাই আমাদেরকে উচিত, আল্লাহর রুজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা। কোনো ইস্যুতে বিচ্ছিন্ন না হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকা। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষার ওপর আমল করে জীবন পরিচালনা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম বিশ্বকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হবার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর রুজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরার তাওফিক দান করুন। আমিন।